শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ), হুসাইন আহমদ মাদানি (উর্দু: حسین احمد مدنی; ৬ অক্টোবর ১৮৭৯ — ৫ ডিসেম্বর ১৯৫৭; ১৯ শা...
শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ), হুসাইন আহমদ মাদানি (উর্দু: حسین احمد مدنی; ৬ অক্টোবর ১৮৭৯ — ৫ ডিসেম্বর ১৯৫৭; ১৯ শাওয়াল ১২৯৬ – ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৩৭৭) ছিলেন উনবিংশ-বিংশ শতাব্দীর ভারতের অন্যতম জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, লেখক ও ইসলামি পণ্ডিত। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, খিলাফত আন্দোলন এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন।[১] ১৯২০ সালে কংগ্রেস-খিলাফত জোট তৈরিতে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ভারতীয় উলামা ও কংগ্রেসের যৌথ আন্দোলনের পথটি তিনি তৈরী করে দিয়েছিলেন ১৯২০ – ১৯৩০ সালজুড়ে তার বক্তৃতা ও পুস্তক প্রকাশের মাধ্যমে। তিনি ভারত ভাগ, দ্বিজাতি তত্ত্বের বিপক্ষে ছিলেন এবং সংযুক্ত ভারতের অভ্যন্তরে ‘সম্মিলিত জাতীয়তাবাদের আদর্শের’ পক্ষে ছিলেন।[২][৩][৪] রাষ্ট্র গঠনের জন্য আঞ্চলিক ও ধর্মীয় পরিচয়ের ভূমিকা নিয়ে বিতর্কে পাকিস্তান আন্দোলনের বিরোধিতা করেন।[৫] ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত তার ‘মুত্তাহেদায়ে কওমিয়্যাত আওর ইসলাম’ গ্রন্থেও তিনি সম্মিলিত জাতীয়তাবাদ,[৬][৭][৮][৯] অখণ্ড ভারতের পক্ষে এবং দেশভাগের বিরুদ্ধে বলেন। গ্রন্থটি ২০০৫ সালে ‘কম্পোজিট ন্যাশনালিজম অ্যান্ড ইসলাম’ নামে ইংরেজিতে অনুবাদিত হয়েছে।[১০] তিনি জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের সভাপতি এবং দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিস ছিলেন। তার সময়কালে দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষাক্রম আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। তিনি দেওবন্দ আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবেও সমাদৃত। ইসলামি শাস্ত্রে তার পাণ্ডিত্য ও অবদানের জন্য তাকে শায়খুল ইসলাম উপাধি দ্বারা সম্বোধন করা হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৯৫৪ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত করে।[১১] ভারতের এই তৃতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননায় যাদেরকে প্রথম ভূষিত করা হয়েছিল তিনি ছিলেন তাদের একজন। ২০১২ সালের ২৯ আগস্ট ভারতীয় ডাক বিভাগ তার সম্মানে একটি স্মারক ডাকটিকিট বের করেছে। জন্ম ও বংশঃ তিনি ১৮৭৯ সালের ৬ অক্টোবর (১২৯৬ হিজরির ১৯ শাওয়াল) ভারতের উত্তরপ্রদেশের উন্নাও জেলার বাঙ্গারমৌ মৌজায় জন্মগ্রহণ করেন। ভাইদের সাথে নামের ধারাবাহিকতা মিলিয়ে তার নাম রাখা হয় হুসাইন আহমদ। জন্ম সাল স্মরণ রাখার জন্য সংখ্যামান অনুযায়ী তার অপর নাম রাখা হয়েছিল “চেরাগ মুহাম্মদ”।[ক][১৪] উল্লেখ পাওয়া যায় যে, এই নামটিও তিনি কখনো কখনো ব্যবহার করতেন।[১৫] তার পিতার নাম সৈয়দ হাবিবুল্লাহ এবং মাতার নাম নুরুন্নিসা।[১৬] তারা শাহ ফজলুর রহমান গঞ্জে মুরাদাবাদীর মুরিদ ছিলেন। তার পিতা উর্দু, ফার্সি ও হিন্দি ভাষার পণ্ডিত ছিলেন এবং এলাহদাদপুরের নিকটস্থ একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। বংশগতভাবে পিতা ও মাতা উভয়ের দিক থেকেই তিনি মুহাম্মদ (স.)-এর বংশধর।[১৭] পঞ্চম পূর্বপুরুষ শাহ মুদনে গিয়ে উভয়ের বংশধারা মিলিত হয়।[১৮]হোসাইন ইবনে আলী ছিলেন তার ৩৩ তম পূর্বপুরুষ। সৈয়দ মুহাম্মদ মাদানি ছিলেন ২৭ তম পূর্বপুরুষ।[খ] প্রথম স্ত্রীর সাথে সংসারে তার দু'জন কন্যা ছিল। স্ত্রী, কন্যাদের মৃত্যুর পর তিনি মোরাদাবাদের হাকিম গোলাম আহমদের জ্যেষ্ঠ কন্যাকে দ্বিতীয় বিবাহ করেন। এই সংসারে তিনি দুই পুত্রের জনক হন।[২০] মাদানি মাল্টায় কারাবন্দি থাকা অবস্থায় স্ত্রী, পুত্রদের মৃত্যু ঘটে।[২০] এরপর তিনি হাকিম গোলাম আহমদের দ্বিতীয় কন্যাকে বিয়ে করেন। তৃতীয় বিবাহের এ সংসারে তিনি দুই সন্তানের জনক হন। আসআদ মাদানি এবং মাজেদা। মাজেদা শৈশবেই মারা যান এবং ১৯৩৬ সালের ৫ নভেম্বর তার এই স্ত্রী মারা যান। তাকে মাজারে কাসেমিতে সমাহিত করা হয়।[২০] এসময় আসআদ মাদানির বয়স ছিল মাত্র ৯ বছর। পরবর্তীতে চাচাত ভাই বশিরুদ্দিনের মেয়ের সাথে তার চতুর্থ বিবাহের প্রস্তাব করা হয়। বয়সের বড় ব্যবধানের কারনে তিনি প্রথমে এ বিয়েতে সম্মত ছিলেন না। এই সংসারে তিনি দুই পুত্র ও পাঁচ মেয়ের জনক হন। দুই পুত্রের নাম আরশাদ মাদানি ও আসজাদ মাদানি। পাঁচ কন্যার নাম রাইহানা, সাফওয়ানা, রুখসানা, ইমরানা এবং ফারহানা। তার স্ত্রী ২০১২ সালের ৫ জুলাই ৯৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। শিক্ষাজীবনঃ ১৮৮৩ সালে ৪ বছর বয়সে বাড়ির মক্তবে মায়ের কাছে তার শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়। বছরখানেক পর তাকে স্কুলে ভর্তি করানো হয় যেখানে তার পিতা শিক্ষকতা করতেন। ১৮৯২ পর্যন্ত স্কুলে লেখাপড়া করার পর তাকে দারুল উলুম দেওবন্দ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ১৮৯৮ সালে দারুল উলুম দেওবন্দে তার অধ্যয়ন সমাপ্ত হয়। তখন তার বয়স হয়েছিল ১৯ বছর। বাড়ির মক্তবে ও স্কুলে ৮ বছর আর দেওবন্দ মাদ্রাসায় ৭ বছর মোট ১৫ বছর ছিল তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনের ব্যাপ্তি। তবে ১৯০৮ সালে মদিনা থেকে ফিরে এক বছর মাহমুদ হাসান দেওবন্দির নিকট পুনরায় হাদিস অধ্যয়ন করেন। সে হিসেবে তার অধ্যয়নকাল ১৬ বছর। মায়ের কাছে তিনি কুরআনের প্রথম ৫ পারা পড়েন। তারপর পিতার উপর তার শিক্ষার দায়িত্ব অর্পিত হয়। তার পিতা এলাহদাদপুরের নিকটস্থ একটি স্কুলে চাকরি করতেন। তিনি পিতার কাছে সকালে ধর্মীয় শিক্ষা এবং ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। তৎকালে স্কুলের সর্বোচ্চ শ্রেণীকে প্রথম শ্রেণী এবং সর্বনিম্ন শ্রেণীকে অষ্টম শ্রেণী বলা হত। মাদানি অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন এবং মাতৃভাষা উর্দু, ইতিহাস, ভূগোল, বীজগণিত, পাটিগণিত ইত্যাদি শাস্ত্রে দক্ষতা অর্জন করেন। কিন্তু স্কুল শিক্ষা তার পছন্দ না হওয়ায় স্কুলের শিক্ষাজীবন সমাপ্তির এক বছর পূর্বে তাকে দারুল উলুম দেওবন্দে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ১৮৯২ সালে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন।[২৩] তখন দেওবন্দ মাদ্রাসার সদরুল মুদাররিস (প্রধান অধ্যাপক) ছিলেন মাহমুদ হাসান দেওবন্দি, মুহতামিম (মহাপরিচালক) সৈয়দ মুহাম্মদ আবেদ ও পৃষ্ঠপোষক রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি। প্রধানত মাহমুদ হাসান দেওবন্দি তার শিক্ষার কাজে তত্ত্বাবধান করতেন। তার বড় ভাই ছিদ্দিক আহমদ মাহমুদ হাসান দেওবন্দির খাদেম হওয়ার সুবাদে প্রথমদিন থেকেই তিনি দেওবন্দির সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পান। মিজান ও গুলিস্তা থেকে তার অধ্যয়ন শুরু হয়। পাঠ উদ্বোধনের জন্য তাকে মাহমুদ হয়।
Hello eBoighar member!
Hello eBoighar member!
Hello eBoighar member!
Are you sure?
By clicking “Accept All Cookies”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and assist in our marketing efforts.