তকীউদ্দীন আহমদ ইবনে আব্দুল হালিম ইবনে আব্দুস সালাম আন-নুমায়রী আল হাররানী (আরবি: تقي الدين أحمد بن عبد الحليم بن عبد السلام النم...
তকীউদ্দীন আহমদ ইবনে আব্দুল হালিম ইবনে আব্দুস সালাম আন-নুমায়রী আল হাররানী (আরবি: تقي الدين أحمد بن عبد الحليم بن عبد السلام النميري الحراني ; ২২ জানুয়ারি ১২৬৩ – ২৬ সেপ্টেম্বর ১৩২৮), যিনি ʾইবনে তাইমিয়া (ابن تيمية) নামে অধিক পরিচিত, ছিলেন একজন সুন্নি ইসলামি পণ্ডিত, মুহাদ্দিস, ধর্মতাত্ত্বিক, বিচারক, আইনজ্ঞ, তর্কসাপেক্ষে দার্শনিক এবং একজন বিতর্কিত চিন্তক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ইলখানাতের শাসক গাজান খানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং মারজ আল-সাফফারের যুদ্ধে বিজয়ী কৃতিত্বের জন্য খ্যাত যার ফলে লেভান্তে মঙ্গোল আক্রমণের অবসান ঘটেছিল। তাঁর নিজের সময়কার এবং পরবর্তী শতাব্দীসমূহের এক মেরুপ্রবণ ব্যক্তিত্ব ইবনে তাইমিয়া সমসাময়িক ইসলামের অন্যতম প্রভাবশালী মধ্যযুগীয় লেখক হয়ে উঠেছেন, যেখানে তাঁর প্রদত্ত কুরআন ও সুন্নাহর বিশেষ ধরনের ব্যাখ্যা এবং তাঁর দ্বারা ধ্রুপদী ইসলামি ঐতিহ্যের বিভিন্ন দিক প্রত্যাখ্যানকে সালাফিবাদ ও জিহাদবাদের মতো সমসাময়িক অতি-রক্ষণশীল মতাদর্শগুলোতে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তারকারী বলে ধারণা করা হয়। তাঁর শিক্ষার বিশেষ দিকগুলি সৌদি আরবে অনুশীলিত হাম্বলি সংস্কার আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাব এবং পরবর্তী ওয়াহাবি আলেমদের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। মিশরীয় সালাফি সংস্কারক রশিদ রিদা তাঁকে হিজরি ৭ম শতাব্দীর একজন মুজাদ্দিদ গণ্য করতেন। অধিকন্তু, অন্য মুসলিমদের বিরুদ্ধে জিহাদকে অনুমোদিত করার ইবনে তাইমিয়া প্রদত্ত বিতর্কিত ফতোয়াটিকে আল-কায়েদাসহ বিভিন্ন জিহাদি সংগঠন তথ্যসূত্র হিসেবে উদ্ধৃত করে থাকে। ইবনে তাইমিয়ার চিন্তার জিহাদবাদী পাঠকে সাম্প্রতিক বিদ্যাবত্তা দ্বারা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। জন্ম ও বংশ পরিচয়: তিনি হলেন আবুল আববাস তকীউদ্দীন শাইখুল ইসলাম ইমাম আহমাদ বিন আব্দুল হালীম বিন আব্দুস সালাম ইবনে তাইমীয়া রাহিমাহুল্লাহ। ৬৬১ হিজরী সালের ১০ রবীউল আওয়াল মাসে তিনি বর্তমান সিরিয়ার হারান এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আব্দুল হালীম ইবনে তাইমীয়া এবং দাদা আবুল বারাকাত মাজদুদ্দীন আব্দুস্ সালাম বিশিষ্ট মুহাদ্দিছ ও হাম্বলী ফিকাহবিদ ছিলেন। আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করার কারণে শিশুকালেই তিনি ইলম অর্জনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। উল্লেখ্য যে, আলেমদের প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী তাইমীয়া ছিলেন শাইখের নানী। তিনি ওয়াজ-নসীহত ও ভাষণ-বক্তৃতা দানে খুবই পারদর্শী ছিলেন। জ্ঞান অর্জন ও জ্ঞান চর্চা: মাত্র বাইশ বছর বয়সে তাঁর তিনি অগাধ পাণ্ডিত্য অধিকারী হন। কুরআন, হাদিস, ফিকহ ও উসুলের সাথে সাথে তিনি আরবী ভাষা ও সাহিত্যে পারদর্শিতা অর্জন করার প্রতিও বিশেষ নজর দেন। তিনি দুশোর বেশি উস্তাদের কাছ থেকে হাদিস শেখেন। কুরআনের তাফসীরের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল সব চেয়ে বেশি। তিনি নিজেই বলেছেন, কুরআনের জ্ঞান আয়ত্ত করার জন্য তিনি ছোট বড় একশোরও বেশি তাফসীর গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন। কুরআন অধ্যয়ন সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেছেনঃ কখনো কখনো একটি আয়াতের অন্তর্নিহিত অর্থ অনুধাবন করার জন্য আমি একশোটি তাফসীরও অধ্যয়ন করেছি। তাফসীর অধ্যয়ন করার পর আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম, হে আল্লাহ, আমাকে এ আয়াতটির অর্থ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান দান করো। আমি বলতাম, হে আদম ও ইবরাহীমের শিক্ষক! আমাকে শিক্ষা দাও আমি বিরান এলাকা ও মসজিদে চলে যেতাম এবং মাটিতে কপাল রেখে বলতাম, হে ইবরাহীমের জ্ঞানদাতা! আমাকে জ্ঞান দাও। কুরআন, হাদিস ও ফকীহর সাথে সাথে কালাম শাস্ত্রেও তিনি গভীর পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। সে সময় কালাম শাস্ত্রে ইমাম আবুল হাসান আশআরীর দর্শন ও নীতিশাস্ত্রের চর্চা ছিল সবচাইতে বেশি। ইলমে কালাম গভীরভাবে অধ্যয়ন করার পরেই তিনি এর যাবতীয় গলদের বিরুদ্ধে লেখনী পরিচালনা করন এবং শক্তিশালী যুক্তি প্রমাণের অবতারণা করে এমন কতিপয় গ্রন্থ রচনা করেন যার জবাব সমকালীন লেখক ও দার্শনিকদের পক্ষে দেয়া সম্ভব হয়নি। তাঁর জনৈক বিখ্যাত প্রতিদ্বন্দ্বী আল্লামা কামালউদ্দীন যামসালকানী জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তাঁর পারদর্শিতা সম্পর্কে মন্তব্য প্রসঙ্গে বলেছেন। কখনো দেখা যায়নি যে, তিনি কারোর সাথে বিতর্কে হেরে গেছে। কোন বিষয়ে কারোর সাথে বিতর্কে নামার পর দেখা গেছে সেই বিষয়ের বিশেষজ্ঞদেরকেও তিনি হার মানিয়েছেন। বাইশ বছর কাল পর্যন্ত জ্ঞান লাভের পর তিনি জ্ঞান বিস্তারে কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর বাইশ বছর বয়সের সময় তার পিতা শিহাবুদ্দীন আবদুল হালীম ইবনে তাইমিয়া(৬৮২হিঃ) মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ছিলেন দামেস্কের প্রধান দারুল হাদিস আসসিকারিয়ার প্রধান মুহাদ্দিস। তাঁর মৃত্যুতে এ পদটি শূন্য হয়। পর বছর তার সুযোগ্য পুত্র ইমাম তাকীউদ্দিন ইবনে তাইমিয়া এ পদটি পূরণ করেন। তিনি বাইশ বছর বয়সে হাদিসের প্রথম দরস দেন। এ দরসে দেশের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও আলেমগণ উপস্থিত ছিলেন। যুবক আলেমের জ্ঞান ও পাণ্ডিত্য সবাইকে মুগ্ধ ও চমৎকৃত করে। এর একমাস পরে জুমার দিন শহরের প্রধান মসজিদ জামে উমুবীতে তিনি পিতার শূন্যস্থানে কুরআনের তাফসীর করার দায়িত্বে নিযুক্ত হন।
Hello eBoighar member!
Hello eBoighar member!
Hello eBoighar member!
Are you sure?
By clicking “Accept All Cookies”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and assist in our marketing efforts.